প্রতিষ্ঠাঃ২০০৭
বিদ্যানিকেতন হাই স্কুল
ফোনঃ০২-২২৪৪৩১১৫৮
sbiddyaniketon135189@gmail.com
"শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ"
প্রতিষ্ঠাতাঃ জনাব কাশেম হুমায়ুন
সিনিয়র সহ-সভাপতির বক্তব্য
স্বপ্ন অনেকেই দেখে। তবে সে স্বপ্ন কখনাে বাস্তবায়ন হয় আবার কখনাে সেটা স্বপ্নই থেকে যায়। এমন একটি দেখার পর যদি সেটা বাস্তবে পরিপূর্ণ হয় তাহলে আকাক্ষা বেড়ে যায়। আমাদের জীবনে যখন এমন একটি স্বপ বাস্তবে পরিপূর্ণতা পায় এরপর অবশ্যই আকাংক্ষা কিংবা প্রত্যাশা বেড়ে যায়। এ স্বপ্নটা আকাশচুম্বি নয়। তবে প্রত্যাশিত। এমন একটা স্বপ্ন দেখলে সেটা পূরণ হতেই পারে। যেটি বাস্তবায়ন করা অনেক দুঃসাধ্য হলেও চেষ্টা থাকলে তা সম্ভব করে তােলা যায়।আমাদের স্বপ্ন ছিল একটি স্কুল করব। বিষয়টি সহজ নয় জেনেও স্বপ্নের পােকাটি সব সময় মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু সুযােগ কখনাে হয়ে উঠেনি।
আর যে এলাকায় বসবাস করি এটি শিল্প আর বাণিজ্যের শহর নারায়ণগঞ্জের অবহেলিত জনপদ। এখানে যারা বসবাস করে তাদের অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ।কিন্তু বাংলা কিংবা ইংরেজি শিক্ষার কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে না উঠায় এখানকার ছেলেমেয়েদের দূর-দূরান্তে গিয়ে পড়াশুনা করতে হতাে। অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা।যাদের নিয়ে আমরা এখনকার বাসিন্দারা গর্ব করি তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ.ব.ম ফারুক, দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ূন, বাংলাদেশ পাটকল করপােরেশের জেনারেল ম্যানেজার প্রয়াত আবদুর রশিদ মিন্টু, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক জাকির হােসেন। এ এলাকার শিশু-কিশােরগুলো পড়াশুনা করবে। কিন্তু কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। তাই একটি স্কুল গড়ে উঠলে এলাকার শিশু কিশােরদের কল-কাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠবে স্কুলের আঙিনা। একদিন তারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে কাশেম হুমায়ুন, ফারুকের মতাে। এমন স্বপ্নের পােকা সব সময় মাথায় ঘুরপাক করত। অবশেষে চড়াই ঊতরাই পেড়িয়ে ২৭ জানুয়ারি, ২০০৮ সালে তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মােশাররফ হােসেন ভূইয়া শিক্ষা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন। যেসব শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা হলাে তাদের বই, খাতা কলমসহ ড্রেস পর্যন্ত আমাদের তৈরি করে দিতে হয়েছিল। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ফাইজুল কবীর এবং পুলিশ সুপার ছিবগাত উল্লাহর সহযােগিতা ছিল আমাদের অনুপ্রেরণা।
মনে পড়ে উদ্বোধনী দিনে অনেক বৃষ্টি হয়েছিল। এক সময় বৃষ্টি আর ঝড়াে হাওয়ায় প্যান্ডেল ভেঙ্গে পড়েছিল। এরই মধ্যেই শুরু হলাে শিক্ষা কার্যক্রম। উপস্থিত সবাই খনার বচন শােনালেন, 'যা হয় মঙ্গলের জন্যই হয়। বৃষ্টিতে নাকি যাত্রা শুভ। বিদ্যানিকেতনের ক্ষেত্রেও তাই হলাে। সেই যে এগিয়ে যাওয়ার পালা শুরু আর পিছনে তাকাতে হয়নি। কাশেম হুমায়ূনের সম্পৃক্ততা আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকল। তাঁর সাথে যুক্ত হলেন কাসেম জামাল, দেলােয়ার হােসেন চুনু, কৃষ্ণধন সাহাসহ অনেকেই। যারা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের বন্ধু ও সহপাঠি। যে স্কুলটি ছােট্ট একটি টিনের ঘরে মাত্র ৫০জন শিক্ষার্থী আর তিনজন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল মাত্র একযুগের মধ্যে এ শহরের একটি অনুকরণীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এখন প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণা আর ৬০জন শিক্ষকের অদম্য ও একাগ্রতার মাধ্যমে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধূলার ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ইতিমধ্যে ঢাকা শিক্ষাবাের্ডের স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শাখায় পিইসি, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করছে। বিদ্যানিকেতন নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে পরপর দুইবার এবং ঢাকা বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ডিজিটাল স্কুলের পুরস্কার অর্জন করেছে। নিজেদের পাশাপাশি ব্যক্তি অনুদান ও সরকারের অর্থায়নে একটি ছয় তলা, একটি পাঁচতলা ও একটি চারতলা ভবন নির্মিত হয়েছে। সরকারের সহযােগিতায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে অত্যাধুনিক ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এখানে স্মার্টবাের্ডের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি সমৃদ্ধশালী বিজ্ঞানাগার, পাঠাগার এবং শিশুদের উপযােগী শ্রেণিকক্ষ ও খেলার রুম তৈরি করা হয়েছে। নিম্নআয়ের মানুষ এবং মধ্যবিত্তের সন্তানদের পড়াশুনা করার একটি ঠিকানা হয়েছে বিদ্যানিকেতন।
প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে বিদ্যানিকেতন ট্রাস্টের মাধ্যমে। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাশেম হুমায়ুনের সাথে রয়েছেন ৩৮জন ট্রাস্টি যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিদ্যানিকেতন হাই স্কুল এগিয়ে যাচ্ছে। রয়েছে ধারাবাহিক সাফল্য। বিগত এক যগের সময়ের মধ্যে দেশের অনেক গুণীজনের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে এ স্কুলের আঙিনা । মক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে বিদ্যানিকেতন। শিক্ষাকে পুঁজি করে যারা বাণিজ্য করছে আমরা সে ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাস করি না। একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে আমরাও পারি তার প্রমাণ বিদ্যানিকেতন। আমরা এখন স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর সাতলাদেশের। যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করবে আমাদের এই অবহেলিত জনপদ ভূইয়ারবাগের সন্তানরা। মেধা আর। মননে বিকশিত হবে আমাদের আগামী প্রজন্ম।
আবদুস সালাম খোকন
সিনিয়র সহ-সভাপতি